Type Here to Get Search Results !

গায়ে লাগছে না শিক্ষার্থীদের ইউনিফরম, দর্জির দোকানে জমেছে ভিড়

0
নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার কারণে দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এতদিনে শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরিবর্তনের কারণে নির্ধারিত ইউনিফর্ম আর গায়ে লাগছে না। এতে নতুন ইউনিফর্ম বানানোর হিড়িক পড়েছে দর্জিপাড়ায়। দীর্ঘদিন পরে আবারও ব্যস্ততা ফিরেছে দর্জি দোকানগুলোতে

দীর্ঘ এই সময়ে ছুটিতে শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি ও বাসা-বাড়িতে বসে থেকে স্বাস্থ্য বেড়ে যাওয়ায় পুরাতন ড্রেস নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়েছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। এজন্য এসব শিক্ষার্থী নতুন ড্রেস, খাতা-কলমসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় করছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দর্জি দোকানগুলোয় সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম বানাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে টেইলার্সে এসেছেন।

দর্জি দোকানে নেকমরদ সরকারি আলিমুদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তাসনিমুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, "আমার ড্রেস ছোট হয়ে গেছে। এখন হঠাৎ করে স্কুল খুলে দেয়ায় মায়ের সঙ্গে নতুন ড্রেস বানাতে আসছি।"

রেমন্ড টেইলার্সের মালিক নায়ারন রায় বলেন, ‘১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলছে। এতে স্কুল ড্রেসের অর্ডার আসতে শুরু হয়েছে। গত ৪ দিনে ২২-২৩টার মতো অর্ডার এসেছে। বর্তমানে স্কুল ড্রেস তৈরি নিয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পার করছি। স্কুল খুললে সামনে আরও অর্ডার বাড়বে।’

কাপড়ের পাইকারি দোকানগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। পৌরসভার সাগর বস্ত্রালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অভিভাবকেরা স্কুল ড্রেসের কাপড় কিনছেন।

অভিভাবক উন্মে হাবিবা বলেন, ‘আমার মেয়ে রাণীশংকৈল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়ে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে ওর ড্রেস ছোট হয়ে গেছে। তাই মেয়ের জন্য ড্রেসের কাপড় কিনতে এসেছি। কেনা হলে দর্জির কাছে বানাতে দেবো।’

সাগর বস্ত্রালয়ের মালিক সুরেন চন্দ্র বসাক জানান, গত কয়েকদিন ধরে বিক্রি বাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে আরও বাড়বে। শুধু শহরের অভিভাবকই না, গ্রামের দর্জিরাও কাপর কিনছেন বলে জানান তিনি।

এছাড়াও,মিলন মাহমুদ নামের এক অভিভাবক বলেন, করোনা শুরুর আগে ২০২০ সালে দিশারী কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল তার ছেলে ঈশান মাহমুদ। এখন সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। সরিষাবাড়ী পৌরসভার কামরাবাদ এলাকায় তার বাসা।
তিনি বলেন, "স্কুল বন্ধ থাকায় দুই বছরে ছেলে অনেক লম্বা হয়ে গেছে, স্বাস্থ্যও একটু ভালো হয়েছে। এখন আর আগের স্কুলড্রেস শরীরে হয় না। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খোলার ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে ছেলের ইউনিফর্ম বের করে দেখে, শার্ট আঁটোসাঁটো হয়ে গেছে। প্যান্ট কোমর পর্যন্ত আসছে না, জুতা জোড়াও পায়ে ঢুকছে না।"

বিক্রেতারা জানান, "মাঝে বেশ খারাপ সময় গেছে। তবে, এখন ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। সরিষাবাড়ী পৌরসভার ন্যাশনাল টেইলার্সের শামীম তরফদার বলেন, আমিই এ বাজারে ছেলেমেয়েদের ইউনিফর্ম সবচেয়ে বেশি বানাই। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণার পর থেকে ইউনিফর্ম বানানোর অর্ডার আসছে। এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।"

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩য় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির ছেলেদের স্কুল ড্রেস (প্যান্ট ও সার্ট) বানানোর মজুরি রাখা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। ৩য় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির মেয়েদের স্কুল ড্রেস (থ্রি-পিচ) বানানোর মজুরি রাখা হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

এদিকে স্কুল কলেজ খোলার কারণে উপজেলার দর্জিরা ড্রেসের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে সুতা ও বোতাম কেনাও শুরু করেছে। দর্জির পেশার সঙ্গে বেচাকেনা বাড়ছে সুতা বোতাম ও লেইস ফিতার দোকানেও।

যাত্রাবাড়ী লিয়াকত টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী লিয়াকত আলী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই বছর ব্যবসা মন্দা ছিল। এখন স্কুল-কলেজ খোলায় ড্রেস বানানোর চাপ তৈরি হওয়ায় তিনজন অতিরিক্ত কারিগর নেয়া হয়েছে।

রাণীশংকৈল কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু শাহান শাহ ইকবাল বলেন, সরকারি নির্দেশনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার সকল প্রস্তুতি আমাদের সম্পন্ন হয়েছে। অনেক ছাত্রছাত্রীদের ইউনিফর্ম ছোট হয়ে গেছে। তাদের ইউনিফর্ম তৈরি করে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Below Post Ad