কিন্তু সত্যি বলতে, শুধু কি এই দিবসেই এই কথাটা আমাদের মনে পড়ে, যখন Facebook বা অন্য Social media তে নিকট বন্ধু তার মা বাবা সমেত ছবি তুলে #Happy_Parents_day লিখে দেয়, তখনই কি drawing room থেকে বেরিয়ে আমরা রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে ভাবি যে মানুষটা রান্নাঘরে হাত পুড়িয়ে, ঘাম ঝড়িয়ে রান্না করছেন, যেই মানুষটা সকালের ভারি বর্ষনকে উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় বাস ঠেলে অফিসে গিয়েছেন, তাদের জন্যও একটা বিশেষ দিন আজ।
হয়তো আমরা যারা সন্তান, আমরা কিছুটা হলেও স্বার্থপর, কিছুটা হলেও হারিয়ে ফেলেছি সেই অনুভূতি যেই অনুভূতি থেকে আমরা মা বাবা কে জড়িয়ে ধরে বলতে পারি যে তাদের আমরা কতটা ভালোবাসি।
তাদের দোয়া, আশীর্বাদ ছাড়া আমরা কি আদৌ টিকে থাকতে পারতাম, তাদের শাসন ছাড়া আমরা কখনও ঠিক ভুলের মানদণ্ড নিজের মনে স্থাপন করতে পারতাম?
এরকম কত প্রশ্নের সম্মুখীন হই আমরা, কোন বিশেষ মুহূর্তে কিংবা হয়তো কেবলই এক ভাবনা যার কোন সূচনা নেই।
আমার মনে পড়ে যখন ছোট বেলায় মা বা বাবা কেউ যখন বকতেন তখন ভাবতাম, যে বড় হলে চাকরী করলে, তাদের ছেড়ে আমি একা থাকবো অথবা কথাই আর কখনও বলবো না, এরকমটা ভেবে রাসভারি হয়ে বসে থাকতাম বারান্দার এক কোণে। একা কাঁদতাম তবে মজার ব্যাপারটা হতো যখন মা বা বাবা আবার খেতে ডাকতেন। খেতে খেতেই তখন মানভঞ্জনের পালা চলতো।
আমি তাদের স্নেহের কাছে সে সব ভাবনার বিসর্জন দিয়ে আবার আগের মতো। এরকম তো আমাদের কতজনের সাথেই হয়েছে। অভিমানে না খেয়ে থাকা, কথা না বলা বা কবে বড় হবো আর বড় হয়ে এটা করবো, সেটা করবো, কত কিছুই ভেবেছি। আজ ভাবলে কিছুটা হাসি পায় তো বটে তবুও হাসির মাঝেও বাস্তবতা এক মন খারাপের দৃশ্যপট তুলে ধরে।
বলুন তো, এসব যেমন আপনার আর আমার কাছে যেমন, অবুঝ শৈশব ঠিক তেমনি হয়তো অন্য কারো কাছে বাস্তবতা। আর সেই বাস্তবতায় দাড়িয়ে চার দেয়ালে বাঁধানো বৃদ্ধাশ্রম গুলো, তাদের মিশে থাকা কান্না, হাসি, অদ্ভুত সব স্মৃতি রোমন্থনের শেষ চিহ্ন গুলো। সেসবের তো আর লিখিত নই আর কল্পনা করেই বা আমি কতটুকু লিখতে পারবো।
আমার সেসব পিতা মাতার কষ্ট বোঝার সাধ্য নেই। হয়তো আমার কোল থেকে আমার সন্তান ধীরে ধীরে বড় হয়ে হাতটা ধরে কোন এক পুরনো ভঙ্গুর কিংবা ঝা চক চকে আর সকল সুবিধা সম্বলিত একটা NGO এর গেটে আমাকে শেষ বিদায় না দিয়েই ফিরে যাবে তখন যদি মন চায়, লেখার চেষ্টা করবো।
এরকম তো কতই হয়। আমরা সকলেই সেটার থেকে নিজেকে বিপরীত স্রোতে রাখতে চাই। হয়তো সকলে পারে না আর যারা না পেরে হেরে যায় তারা সবথেকে কাছের বন্ধুদের হারায়।
মাঝে মাঝে যে ভাবি না তা নয়, এটা কি সম্ভব নয় যে পিতা মাতা ও তাদের সন্তানদের মধ্যে থাকা দূরত্ব চাইলেই মিটিয়ে ফেলা যেত, যুদ্ধ শেষে সন্তান বাড়ি ফিরে মা কে জড়িয়ে ধরতো, বাবা সন্তানের কাছে যুদ্ধের গল্প শুনতো যেমনটা ঘুমের সময় বাবা তাকে পক্ষীরাজের গল্প শোনাতেো। সত্যিই কি এমনটা হবে কোন একদিন?
সত্যিই বলছি, আমি জানি না এর উত্তর কারণ এখনও আমার মা, বাবা তারা আমার পাশে আছেন। অদৃশ্য হয়েই হয়তো মাথায় হাত রেখেছেন।
বাবা মায়ের সাথে হয়তো সারাদিনে খুব কমই কথা হয়ে ওঠে তবুও ভালোবাসা কি সমানুপাতিক হারেই কমবে, আমি বিশ্বাস করি না।
আজ তারা আছেন, কাল হয়তো থাকবেন না। তখন শূণ্যতার আসল মানে হয়তো পারিপার্শ্বিকতা আর সময়, আমাদের বুঝিয়ে দেবে।
তবে এসব কঠিন বাস্তবতার আড়ালেও একটা বর্তমান আছে যেটা আমাদেরই হাতে। সেটাকে নাহয় আজ দিলাম আমাদের পিতা মাতার উদ্দেশ্যে।
আজ না হয় মন খুলে কথা হোক তাদের সাথে। রাতের খাবারটা Drawing room এ না খেয়ে এক সাথে এক টেবিলে আজ হোক। আর phone এর গ্যালারীতে অনেক বন্ধুদের সাথে তোলা সেলফির মাঝে, একটা ছবি থাকুক আমাদের জীবনে এই বিশেষ বন্ধুদের নিয়ে, আমাদের মা বাবাদের নিয়ে।
আজ এই বিশেষ দিনটির আড়ালে এটুকু আমার অনুভূতির আড়ালে থাকা কিছু কথা।
কিছু বাস্তব, কিছু ভাবনা কিছু প্রশ্ন সব মিলিয়ে বুকের মধ্যে জমাট ভারের কারণে যেমন চোখটা ভিজে যায় তেমনি ভিজে যায় আমাদের দম্ভ, আমাদের নিজস্বতা, আমাদের একাকিত্ব যা বাস্তবতার চাপিয়ে দেওয়া ওজন। তখন কেবলই আমরা সকলেই এক, একটা পরিবার, মা বাবা নিয়ে একটি সুখী পরিবার।
লেখক : Gaurab Chakroborty