আমরা জানি বাংলা মাস মোট 12 টি তা হচ্ছে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় শ্রাবণ ভাদ্র-আশ্বিন কার্তিক-অগ্রহায়ণ পৌষ-মাঘ ফাল্গুন-চৈত্র। বৈশাখ হচ্ছে বাংলা সনের প্রথম মাস। এই বৈশাখ মাসের প্রথম দিন অতিবাহিত হয় বলে বাংলা নববর্ষের অন্য নাম পহেলা বৈশাখ। এই বাংলা সন চালু করেন মুঘল সম্রাট আকবরের মন্ত্রী টোডর মহল। সারাদেশে প্রতিবছরই উৎসবমুখর পরিবেশে এই পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়। পৃথিবীর সকল বাঙালি বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। প্রতি বছরই এই দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানারকম আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। পূর্বে পহেলা বৈশাখের অন্যতম অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা। হালখাতা হচ্ছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন গ্রাহকের দোকানদারকে বাকি টাকা শোধ করে নতুন খাতা খোলার অনুষ্ঠান। তবে বর্তমানে বাংলা নববর্ষের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় গুলো হল বৈশাখী মেলা। এই মেলা সর্বদাই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পালন করা হয়। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলা বসে ঢাকার রমনা বটমূলে। এখানে হাজারো মানুষের সমাবেশ ঘটে। এই মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য তরুণরা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও তরুণীরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরিধান করে। ঐদিন শহরের দিকে হাজার মানুষের উপস্থিতিতে কারণে যানজট দেখা দেয় কিন্তু গ্রামের দিকে বৈশাখী মেলায় নানা ধরনের কারুশিল্প বিক্রি করতে দেখতে পাওয়া যায়। আবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তাইতো ছেলেমেয়েদের আনন্দের সীমা থাকে না। বিশেষ করে আবৃত্তি নাচ গানে মুখরিত থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার কোনো কোনো এলাকায় নৌকাবাইচ, হাডুডু, ষাড়ের লড়াই, ঘোড়া দৌড় ইত্যাদি খেলার প্রতিযোগিতা করে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পালন করে বৈসাবি উৎসব। আবার অনেক জায়গায় পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। এই দিনের সর্বপ্রকার মানুষের নিত্য পোশাক পরিধান করে। জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। এই পহেলা বৈশাখে সারা বছরের সমস্ত গ্লানি মুছে দিয়ে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব চুকিয়ে বাঙালি জাতির প্রাণের এক আনন্দধারা বইয়ে দেয়। তাইতো বাংলা নববর্ষকে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একটি বিশেষ উপাদান বলা যেতে পারে। বাঙালির মিলন মেলার এক সেতুবন্ধন তৈরি করে এই পহেলা বৈশাখ।
-পারভেজ আহামেদ