শেখ রাফিদ ইসলাম
কাঁচের জানালা বিদীর্ণ করে হানা দেয় রুক্ষ রোদ,
কারণ, জড় জানালাকে পর্দানশিন করার কেউ নেই;
অ্যালার্ম ঘড়িটা বিগতযৌবনা বিনোদিনীর মতো বকে যায়,
কারণ, কিছুক্ষণ দিবানিদ্রার প্রশ্রয়দাত্রী নেই।
সেক্ষেত্রে, আমার আর পাশ ফিরে শোয়া হয় না,
প্রাতঃকালে শরীর মোড়া চুম্বকচাদরের আলিঙ্গন সহ্য হয়না
পার্শ্ববর্তিনীর আহ্লাদে প্রেমভাব জাগে না,
সকালের স্বাস্থ্যচর্চা বিষয়ে পাণ্ডিত্য ফলানো হয় না।
কখনো কমলা-তরলে, কখনো চিরতার জলে,
তুমি অবাস্তবে ভাগ বসাতে এসো।
কোনো বর্ষাঘন বিকেলে, কোনোদিন রেস্তোরাঁ-ক্যাফেতে,
তুমি হয়ে যাও কাল্পনিক সঙ্গিনী।
অসময়ে ধ্বনিত ফোন কলে কিংবা ভুতুড়ে কোনো গলিতে,
অলীক আকাঙ্ক্ষায় এসে যাও তুমি।
স্বসৃষ্ট কবিতায় কিংবা আংটিহীন অনামিকায়,
তোমাকে বড্ড মনে পড়ে যায়।
আজও,
জন্মদিন-জৌলুস কিংবা যন্ত্রণায় আমি তটস্থ থাকি,
অপেক্ষা করি একটি টেলিফোন-প্রতিধ্বনির,
মোমবাতি বসানো যে খাদ্যবস্তুটিকে তোমরা ‘কেক' বলো,
আমি একাই সেটার সাথে কাটাকুটি খেলি।
আজকাল,
সঙ্গলাভের আবদারে আমি আর শশব্যস্ত হই না,
তোমার জন্মতিথিতে চাঁদের বুড়ি কিংবা জোছনাকে অশ্রুসিক্ত করি,
কলির সাঁঝে কলিংবেল বেজে ওঠে, কোনো সাক্ষাৎপ্রার্থী থাকে না,
ব্ল্যাক আউটের রাতে পর্দার আড়াল থেকে কেউ ধাপ্পা দেয় না।
নিত্য নিশিতে ধোঁয়া-ওঠা পানীয়ের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করি,
আমার রাজ্যের জড় পদার্থেরা একটি স্পর্শের প্রতীক্ষা করে,
যে গোছালো স্পর্শ তাদেরকে সুবিন্যস্ত করতে পারত,
আর, আমি অতন্দ্র প্রহরী হই তোমার অবয়বের আশায়।
ধরা যাক,
রাতদুপুরের রঙ্গ-রসিকতা তুমি বিস্মৃত হয়েছ।
ধরো যে,
শূন্য অনামিকা পূর্ণ হবার গল্পটা একজন কবির কল্পনা।
মনে করে নাও,
আমার জ্বরের জলপট্টিতে তোমার উষ্ণতা ছিল না।
কিন্তু, জেনো,
আমার প্রথমা কস্মিনকালেও দ্বিতীয়া হবে না,
পদ্মমূলে সর্প হয়ে আর না-ই বা জড়ালাম,
তবু, পদ্মপাতায় জল হবার জমিদারি আমার পোষাবে না,
শাকাহারী সন্ন্যাসী ভালো, সর্বভুক হতে চাই না।
আজকাল, রাগে-অনুরাগে, খুব আলগোছে মনে হয়,
আমার নিদ্রাকর্ষক পালঙ্ক যেন মুর্দাবাহী খাটিয়া,
কোমল কাশ্মীরি শালটা যেন কাফনের কাপড়,
প্রাতরাশের শরবতকে মনে হয় হেমলক-নির্যাস,
টেলিফোনে আমি শুনি শেষ ট্রেনের হুইসেল
প্রতিবেশীরা ঠিক নেকনজরে আমাকে দেখেন না,
কবিত্বসমেত এই ‘আমি'টার ওজন জানো?
অতীত আমার অসি, তোমাকে করেছি ঢাল,
আমার ভগ্ন নখে আজও তোমার প্রোটিন মাখানো!
আমি জানি, এসব নিছক প্রহেলিকা কিংবা ভাবনাবিলাস,
তবু, আমার কাল্পনিক কথোপকথন কাঁঠালের আমসত্ত্ব নয়,
আমার অন্ধ আদর পেয়ে এখন এটা ‘টেলিপ্যাথি’,
প্রিয় পোষ্যের মতো একে আমি প্রশ্রয় দিয়ে যাব।
কিন্তু তুমি?
তুমি কি আড়চোখে আপনজনকে খুঁজে যাও?
আজও কি সিক্ত চোখজোড়া ঢেকে রাখো চশমায়?
এখনো কি পর্দার ওপারে পরম প্রিয়তমকে সাজাও?
কখনো কম্পিত ঠোঁটে আমাকে কি মনে পড়ে?
কোনো এক কফির পেয়ালায়?
বি: দ্র - কবিতাটির সকল স্বত্ব ‘শেখ রাফিদ ইসলাম’ এর উপর বর্তায়।